ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

‘দেশ এগিয়ে যাক আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে’ -আদিবাসীরা দিবসে বক্তারা

adibashi-dibos-lamaউছেং মার্মানী, বান্দরবান থেকে :

১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর থেকে বাঙ্গালিরা পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। ৫২-তে এসে বাঙ্গালিদের মায়ের ভাষা, মুখে ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা। বাংলা ভাষাকে মূল্যায়ন না করে উর্দু করার ষড়যন্ত্র করেছিল। পাকিস্তানিরা বাঙ্গালিদের মায়ের ভাষা, মুখে ভাষা কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অধিকার, আত্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। পাকিস্তানিরা পারেনি। দিনের পর দিন পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়া হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষনাতে নির্যাতনের শিকার এদেশে মানুষ ঝাপিয়ে পরেছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। এদেশের বীর সৈনিকেরা আমাদের জন্য এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা।

কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক মাঈনউদ্দিন মাহিম। তিনি আজ মঙ্গলবার আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবসে বান্দরবান জেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে এ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরো বলেন, যে জাতি নির্যাতনের শিকার হয়ে, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে, মায়ের ভাষা-মুখের ভাষা রক্ষায় জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। আজ তাদের হাতেই আবার আদিবাসীরা নির্যাতনে শিকার হলে এর চেয়ে বড় লজ্জা বা ঘৃনার কি হতে পারে। বর্তমান সময়ে এসে সভ্য বাঙ্গালীদের দ্বারা আদিবাসীরা নির্যাতনের শিকার হলে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। আদিবাসী অধিকার রক্ষায় সরকারকেই অগ্রণি ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ার আগে আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে র‌্যালি বের করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজার মাঠ থেকে র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে জেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-এ শেষ হয়। র‌্যালিতে জেলার মারমা, ¤্রাে বা মুরং, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, খিয়াং, লুসাই, চাক, খুমি ও রাখাইন আদিবাসীরা অংশ নেন। র‌্যালির শুভ উদ্বোধন করেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থুইসাপ্রু মাষ্টার।

জেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা পাঠ্যক্রম চালু, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, ভ্রাতৃঘাটি সংঘাত বন্ধ, পর্যটন ও বনায়নের নামে ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ, বৃহৎ গোষ্ঠীর আগ্রাসন বন্ধ ও আত্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকারের উপর জোর দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি বান্দরবান শাখার আয়োজনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, ক্যহ্লাউ মারমা। অনুষ্ঠানে আদিবাসী নেতা লেলুং খুমি বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেশন নম্বর ১০৭ অনুসাক্ষর করেছে। অথচ ওই কনভেনশনে স্বীকৃত আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার তথা ভূমির ওপর ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকার, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন লাভ, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী ভূমিকা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি অধিকার বাস্তবায়নে কোনো সরকারই এগিয়ে আসেনি। বরং ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দেশের বাঙ্গালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাদের “আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী” ‘উপজাতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আদিবাসী নেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার ও সংরক্ষণ কমিটির জেলা আহ্বায়ক জোয়াম লিয়ান আমলাই বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা আদিবাসীরা তাদের মাতৃভূমি থেকে দিন দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। উচ্ছেদ হতে বাধ্য করা হচ্ছে আদিবাসীদের। সংবিধানের ২৩ (ক) ধারায় “আদিবাসী” শব্দের পরিবর্তে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ হিসেবে উল্লেখ করে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষন ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। যার ফলে আদিবাসীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মৌলিক অধিকার, যেমন- রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভূমি-সংক্রান্ত অধিকারের বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। ২৩ (ক) ধারার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে “আদিবাসীদেরকে” দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, আদিবাসীদের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও আদিবাসী নেতা অংচমং মারমা, আইনজীবী মাধবী মার্মা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন আদিবাসী নেতা দীনেন্দ্র ত্রিপুরা।

পাঠকের মতামত: